বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আমরা বিভিন্ন রকম খাবার ও পানীয় সম্পর্কে জানতে পারি, যেগুলো শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, আবার ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এগুলোর মধ্যে সব খাবার সঠিকভাবে কাজ না করলেও একটি পানীয় কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী, সেটি হলো জিরা পানি। আজকের ফিচারে আমরা জিরা পানির উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
জাদুকরী পানীয় জিরা পানি
প্রতিদিনের রান্নায় কম-বেশি সবাই জিরা ব্যবহার করে থাকেন। সেই প্রাচীনকাল থেকেই জিরা আমাদের এই উপমহাদেশের রান্নাঘরে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই বিস্ময়কর মসলার উপকারিতা পাওয়ার সহজতম উপায় হলো জিরা পানি পান করা। এই জিরা পানির উপকারিতার তালিকা কিন্তু বেশ বড়। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থগুলিতে এই পানীয় সম্পর্কে নথিভুক্ত আছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা যাচাই করা হয়েছে।
কীভাবে জিরা পানি তৈরি করতে পারেন?
জিরা পানি তৈরি করা কিন্তু বেশ সহজ। আপনাকে সারা রাতভর এক মুঠো জিরা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বেশি সময় ধরে ভিজিয়ে রাখার ফলে জিরার বীজগুলো ফুলে উঠে এবং পানিতে বায়ো অ্যাকটিভ কম্পাউন্ড তৈরি করে। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে পান করলে, অল্প সময়ের ভেতরেই স্বাস্থ্যের ইতিবাচক উন্নতি নজরে আসে।
জিরা পানির উপকারিতা জানুন
জিরা পানি কেন ডিটক্স (detox drink) পানীয় হিসেবে সেরা, আসুন কারণগুলো জেনে নেই।
১) কম ক্যালরি
এক চা চামচ জিরার বীজে মাত্র সাত ক্যালরি থাকে! যা অন্যান্য পানীয়ের তুলনায় খুবই কম। তাই কম ক্যালরির এই পানীয় পান করলে ওজন বাড়ার কোনো চিন্তাই নেই।
২) অ্যান্টি অক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ
জিরার বীজে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি শরীরের অভ্যন্তরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে। জিরা পানি নিয়মিত পান করলে তা আপনার দেহের সিস্টেম থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলিকে নির্মূল করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।
৩) হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়
নিয়মিত জিরা পানি পান করলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে। জিরার বীজে থাইমল নামক একটি নির্দিষ্ট যৌগ রয়েছে, যা গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। এটি প্রোটিন, ফ্যাট ও চিনির মতো জটিল নিউট্রিয়েন্ট ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা, যেমনঃ বদহজম, ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব দূর করে।
৪) মেটাবলিজম ও ফ্যাট বার্ন বাড়ায়
জিরা পানি শরীরের মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে এবং ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। তাই পেটের চর্বি থেকে মুক্তি পেতে এই ডিটক্স ওয়াটার বেশ উপকারী। তবে শুধু ডিটক্স ওয়াটার পান করলেই হবে না, সেই সাথে প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি জিরা পানি পান করলে মেটাবলিজমের হার বেড়ে যায়, যা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জিরার বীজে বায়ো অ্যাকটিভ যৌগের উপস্থিতির কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ফাইবারের একটি ভালো উৎস হলো জিরা। জিরা পানি পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে বাধা দেয়। এছাড়াও এটি পাচনতন্ত্র ও মলত্যাগের সিস্টেমে সংক্রমণ বা ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
৬) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
জিরা পানিতে রয়েছে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রোপার্টিজ, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এটি মেটাস্ট্যাসিস প্রতিরোধ করে, যাতে করে শরীরের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার ছড়ায় না।
৭) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
জিরা পানি রক্তে শর্করার মাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৮) শরীরকে হাইড্রেট করে
জিরা পানি আমাদের শরীরকে হাইড্রেট করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করে।
৯) অ্যাসিডিটি উপশম করে
জিরা পানির উপকারিতা হিসেবে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। এই পানীয় অ্যাসিডিটি কমাতে ও প্রতিরোধে কার্যকরী। যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন জিরা পানি পান করলে অবস্থার উন্নতি দেখতে পাবেন আশা করি।
১০) রক্তশূন্যতা কমানোতে সহায়ক
জিরার বীজে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্য আয়রনের প্রয়োজন। পানি পান করলে তা রক্তস্বল্পতার উপসর্গ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহণের জন্য আরো প্রয়োজনীয়।
১১) হার্টের জন্য ভালো
জিরার পানি আমাদের শরীরে রক্তচাপ, ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের হৃদপিণ্ডকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
১২) ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে
সুন্দর ত্বক পেতে কে না চান? ত্বকের ধরন যেটাই হোক, জিরা পানির উপকারিতা কিন্তু সব ত্বকেই পাওয়া যায়। জিরার পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টিজ রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। তাই স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য নিয়মিত জিরা পানি পান করা ভালো। এটি ব্রণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
১৩) চুল ঘন করতে সাহায্য করে
জিরার পানি আমাদের চুলের জন্যও ভালো। এটি আমাদের চুলকে মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। এর পাশাপাশি এটি খুশকি এবং অকালে চুল পাকা রোধ করে।
১৪) মাসিক চক্র নিয়মিত করতে সাহায্য করে
অনিয়মিত মাসিক চক্র নারীদের একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এই ধরনের সমস্যার জন্য জিরা পানি পান করা বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ এটি জরায়ুকে সংকোচন করতে উদ্দীপিত করে, যা পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। জিরা পানি পান করলে মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম হয়।
১৫) প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে
জিরা আয়রনে সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের খাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর। এটি দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে এবং নিশ্চিত করে যে শিশুটি সমস্ত সঠিক পুষ্টি পায়।
জিরা পানি পান করার সেরা সময়
ঘুম থেকে উঠার পর দিনের শুরুতে জিরা পানি পান করা সবচেয়ে ভালো। সকালে খালি পেটে জিরা পানি পানের উপকারিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে হজমে সহায়তা করা, ফোলাভাব কমানো এবং ওজন কমানো। এই পানীয়টি সারাদিনের যেকোনো সময় পান করা যেতে পারে, তবে দিনের প্রথম দিকে পান করা হলে এটির সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়।
এটুকুই ছিলো জিরা পানির উপকারিতা নিয়ে আজকের আলোচনা। পরিশেষে বলা যায়, এটি একটি পুষ্টিকর পানীয় যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময় করতে পারে। তবে হ্যাঁ, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়, জিরা পানির ক্ষেত্রেও এ কথাটি মনে রাখবেন। এই পানীয় পান করার পর যদি আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, তবে এটি পান করা থেকে বিরত থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছবিঃ সাটারস্টক, সাজগোজ
The post জিরা পানির ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা যা জানলে চমকে যাবেন! appeared first on Shajgoj.